নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী– Netaji Subhas Chandra Bose Biography in Bengali
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অপরাজেয় মূর্ত প্রতীক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose)। ভারত জননী বিদ্রোহের কোলে যে অগ্নিশিশুদের ভূমিষ্ঠ করেছিলেন তাদের মধ্যে সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন অন্যতম, যিনি পরাধীন জাতির চিত্তে নব প্রাণসঞ্চারের ব্রত গ্রহণ করেছিলেন।
নেতাজী সুভাষ বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) ছিলেন ভারতবর্ষের মুক্তিকামী জনগণের প্রাণসত্তা । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose)এর জীবন ছিলো ত্যাগে শুভ্র, গৌরিক দাসত্বের শৃঙ্খল মোচনে উৎসর্গীকৃত । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) ভারতের ‘জনগণ মন অধিনায়ক’ । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) ছিলেন ভারতবর্ষের সমগ্র মুক্তিপাগল জনগণের জাগ্রত আত্মার সোচ্চার কন্ঠ ।
শুধু ভারত নয়, সমস্ত পৃথিবীর সশস্ত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এক স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) যেভাবে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রাম করেছিলেন, তা আজও আমাদের মনে বিস্ময়ের উদ্রেক করে । আজাদ হিন্দ ফৌজের সুদক্ষ পরিচালনা থেকে শুরু করে ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া, সাবমেরিন যাত্রায় পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়া, বারে বারে ছদ্মবেশ ধারণ করে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়া সব কাজেই নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) ছিলেন অগ্রগণ্য । এমনকি মহাত্মা গান্ধির মতো এক দেশবরেণ্য নেতার বিরুদ্ধে লড়াইতে নেমে জয়যুক্ত হয়েছিলেন ।
একসময় ভারতের তরুণ সমাজের নয়নমণি ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু । নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর(Netaji Subhas Chandra Bose) জীবনের শেষ দিকটা আমরা জানি না । অনেকে বলে থাকেন, বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে । অনেকে বলেন, শেষ পর্যন্ত তাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ব্রিটিশরা নিয়ে গিয়েছিলেন । আবার অনেকে বলেন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) সাইবেরিয়াতে রুশদের হাতে বন্দি ছিলেন।
আমাদের কাছে নেতাজি সুভাষ মৃত্যুঞ্জয় । আমরা বিশ্বাস করি, এমন মহাত্মা মানুষের মৃত্যু নেই । দীর্ঘদিন ধরে তিনি আমাদের মনের মনিকোঠায় বেঁচে আছেন এক উজ্জ্বল দীপশিখা হয়ে ।

নেতাজী সুভাষচন্দ্রনেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) বসু কে ছিলেন ?
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র, যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক নামক একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। ২০২১ সালে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার জন্মবার্ষিকীকে ‘জাতীয় পরাক্রম দিবস’ বলে ঘোষণা করেন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুরনেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) জন্ম
মুক্তিযুদ্ধের অগ্রাধিনায়ক ও বীরশ্রেষ্ঠ বিপ্লবী সুভাষচন্দ্রের(Netaji Subhas Chandra Bose) জন্ম হয়েছিল কটক শহরে ১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারি । তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ওড়িশার কটক শহরে জনৈক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রত্নগর্ভা গৃহপত্নী প্রভাবতী দেবী ছিলেন তাঁর মাতা ও পেশায় উকিল জানকীনাথ বসু ছিলেন তাঁর পিতা। সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন বসু পরিবারের ষষ্ঠ সন্তান।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর পিতামাতা
বাবা জানকীনাথ বসু ও মা প্রভাবতী দেবী । বাবা জানকীনাথের বাসভূমি ছিল চব্বিশ পরগণার কোদালিয়া গ্রামে । অভাব অনটনের মধ্যেই বড় হয়ে ওঠেন জানকীনাথ । পরে কটক শহরে গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করলেন । কয়েক বছরের মধ্যেই নিজের যোগ্যতায় কটকের সবচেয়ে খ্যাতিমান উকিল হয়ে ওঠেন । পরিশেষে সরকারী উকিলের পদ লাভ করেন । তিনি ছিলেন সৎ দৃঢ়চেতা মানুষ ।
স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে মতান্তর হওয়ায় সরকারী উকিলের লোভনীয় পদকে তিনি হেলায় ত্যাগ করেন । কিন্তু উকিল হিসাবে আইনের মধ্যেই তিনি তাঁর প্রতিভা ও কর্মশক্তিকে আবদ্ধ করে রেখে জনসাধারণের কল্যাণকর্মের সংশ্লিষ্ট নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও নিজেকে জড়িত করেন । বিভিন্ন জনহিতকর কর্মের জন্য সমগ্র ওড়িশায় বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন ।
বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের জন্য জানকীনাথ ইংরাজ সরকারের কাছ থেকে ‘রায়বাহাদুর’ খেতাবে সম্মানিত হয়েছিলেন ।
দেশে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় সরকারের দমন নীতির প্রতিবাদে জানকীনাথ সরকারের দেওয়া রায় বাহাদুর খেতাব বর্জন করে লাঞ্ছিত দেশভক্তদের শ্রদ্ধা অর্জন করেন ।
প্রভাবতী দেবীও ছিলেন স্বামীর মতই আত্মসচেতন মহিলা । সকল ব্যাপারেই তাঁর আত্মমর্যাদাজ্ঞান ও তেজস্বিতা সকলের মনে সম্ভ্রমের উদ্রেক করত । প্রতিবেশী ও অন্যান্য সকল শ্রেণীর মানুষের দুঃখ দুর্দিনে হৃদয়ভরা সহানুভূতি ও দয়া এই দম্পতির মধ্যে প্রকাশ পেত । প্রভাবতীদেবী ছিলেন উত্তর কলকাতার হাটখোলার ঐতিহ্যপূর্ণ দত্ত পরিবারের কন্যা।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনীছক
নাম (Name) | নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (Netaji Subhas Chandra Bose) |
জন্ম (Birthday) | ২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭ (23rd January 1897) |
জন্মস্থান (Birthplace) | কটক, ওড়িশা, ভারত |
অভিভাবক (Parents)/ পিতা ও মাতা | পিতাঃ জনকীনাথ বসু মাতাঃ প্রভাবতী দত্ত |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
রাজনৈতিক দল | ফরওয়ার্ড ব্লক |
অন্যান্য রাজনৈতিক দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
দাম্পত্য সঙ্গী (Spouse) | এমিলি শেঙ্কল |
সন্তান | অনিতা বসু পাফ |
শিক্ষা | ব্যাপটিস্ট মিশন’স প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় স্কুল, কটক, ১৯০২–০৯ র্যাভেনশো কলেজিয়েট স্কুল, কটক, ১৯০৯–১২ প্রেসিডেন্সি কলেজ, কলকাতা, ১৯১২–১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯১৬ স্কটিশ চার্চ কলেজ, কলকাতা, ২০ জুলাই ১৯১৭–১৯১৯ ফিটজউইলিয়াম হল, নন-কলেজিয়েট স্টুডেন্টস বোর্ড, কেমব্রিজ, ১৯১৯-২২ |
পরিচিতির কারণ | ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগঠক ও সর্বাধিনায়ক |
মৃত্যু (Death) | অমীমাংসিত (তবে, ১৫ অগাস্ট ১৯৪৫, ভারত সরকার কর্তৃক স্বীকৃত) |
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর শৈশবকাল
ছোটোবেলায় সুভাষ(Netaji Subhas Chandra Bose) ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন । সবসময় মা বাবাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জানার আগ্রহ ছিল আকাশচুম্বী । পরিবারের অন্যান্যদের মতো তাঁকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইওরোপীয়ান স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল । স্কুলটি ব্রিটিশ ধারায় পরিচালিত । এইজন্য দেশি স্কুলগুলিতে পাঠরত সঙ্গীদের তুলনায় সুভাষচন্দ্র ইংরাজি ঘেঁষা শিক্ষায় এগিয়ে ছিলেন । এই ধরনের স্কুলে পড়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত কিছু বৈশিষ্ট্য লাভ করানো হয় । সুভাষ হয়ে উঠলেন নিয়মানুবর্তিতার প্রতীক ।
সঠিক আচার ব্যবহার শিখলেন কাজে পরিচ্ছন্নতা এলো তা সত্ত্বেও সাহেবী স্কুলের পরিবেশ তার ভাল লাগতো না । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এখানে তাকে একটা কৃত্রিম জগতের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে । স্কুলের চার দেওয়ালের বাইরে বিশাল ভারতবর্ষ পড়ে আছে । সেই ভারতের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর নিরন্ন তাদের কথা সবচেয়ে আগে চিন্তা করতে হবে ।
এল ১৯০৯ সাল সুভাষ তখন বারো বছরের এক বালক । ইওরোপীয়ান মিশনারী স্কুল ছাড়ার সময় হয়েছে এই খবরে সুভাষ(Netaji Subhas Chandra Bose) অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষাজীবন
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর প্রাথমিক শিক্ষা
এবার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) এলেন র্যাভেন্স কলেজিয়েট স্কুলে । এখানে ভরতি হবার পর তাঁর মানসিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে গেল । এই স্কুলে ভারতীয় বাতাবরণ ছিল । নিজের হারানো আত্মবিশ্বাস নতুন করে ফিরে পেলেন । প্রাথমিক স্তরে তাঁকে মাতৃভাষা বাংলা শেখানো হয়নি । গোড়ার দিকে বাংলা ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে যথেষ্ট ভালো ফল করেছিলেন । কঠিন কঠোর পরিশ্রম করে বাংলা ভাষা শিখলেন । প্রথমবার বার্ষিক পরীক্ষায় বাংলাতে সবচাইতে বেশি নম্বর পেলেন । শুধু তাই নয়, নিষ্ঠার সঙ্গে সংস্কৃত শিখতে শুরু করেছিলেন ।
খেলাধুলার প্রতি তখন থেকেই সুভাষের(Netaji Subhas Chandra Bose) অনুরাগ ছিল । আক্ষেপ করে পরে বলেছেন, ‘স্কুলে খেলাধুলার কোনো পরিবেশ ছিল না । তাই আমার মনের একটা সাধ অপূর্ণ থেকে গেছে’ ।
রাভেনস কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষক এবং ছাত্রদের মধ্যে ওড়িয়া এবং বাহালি দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন । তাদের সম্পর্ক ছিল অত্যস্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ।
সুভাযের(Netaji Subhas Chandra Bose) মা বাবা উদার মনোভাবাপন্ন হওয়াতে সুভাষ ছিলেন প্রগতিপন্থী । তখন থেকেই নানা সমাজসেবামূলক কাজে যোগ দিয়েছিলেন ।
শিক্ষকদের মধ্যে যিনি সুভাষের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছিলেন, তিনি হলেন প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাস । তিনি এক আদর্শবাদী মানুষ শিক্ষকতাকে মহান ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন । ছাত্রদের মনে নৈতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে দিয়েছিলেন । তিনি বলেছিলেন, নৈতিকতার প্রতি আকর্ষণ না থাকলে মানুষ সত্যিকারের মানুষ হতে পারে না । ছাত্রজীবন থেকে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে বিরাগের ভাব সৃষ্টি হয়েছিল । তার ছাত্রজীবনের এই বিরাগ ক্রমশঃ বিদ্বেষে পরিণত হয়ে ওঠে ।
এই সময় একদিন সুভাষ জানতে পারলেন, স্বদেশী আন্দোলনের সহায়ক বিবেচনা করে ইংরাজ সরকার সরকারী কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাসকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ।
সুভাষ(Netaji Subhas Chandra Bose) স্কুল ও কলেজের ছাত্রদের সংগঠিত করে সরকারী আদেশের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালেন । সরকারী হাইস্কুলের শিক্ষক বেণীমাধব দাস, তাকে শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে বদলী হতে হল । সুভাষ তখন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কলেজ জীবন
স্কুল জীবনের শেষে কলকাতার একটি দলের বার্তাবহ এক দূত তার সঙ্গে কটকে দেখা করেন । তার মাধ্যমেই সুভাষ রাজনৈতিক জগতের সঙ্গে পরিচিত হন । কটকের নিস্তরঙ্গ আবহাওয়ার মধ্যে বসে শহর কলকাতার উদ্দীপনাপূর্ণ পরিবেশের খবর রাখতে পারেননি । ওই দূতের মাধ্যমে সবকিছু শুনলেন । কলকাতায় আসার জন্য তখন তিনি ছটফট করছেন।
১৯১৩ খ্রিঃ র্যাভেন্স কলেজিয়েট স্কুল থেকেই সুভাষচন্দ্র প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে বৃত্তিলাভ করলেন । শেষ পর্যন্ত ঠিক করা হল উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতায় পাঠানো হবে ।
এটা সুভাষের(Netaji Subhas Chandra Bose) জীবনের এক ঐতিহাসিক সমাপতন । কলকাতায় না এলে তিনি পরবর্তীকালে বিশ্বের এক প্রধান রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসনে উপবিষ্ট হতে পারতেন না ।
কলকাতায় সুভাষের ভাগ্যে কী লেখা ছিল, পরিবারের আপনজনেরা বোধহয় আগে থেকে তা অনুধাবন করতে পারেন নি । মফস্বল শহর থেকে কলকাতার মতো বিশাল শহরে পারিপার্শ্বিকতার ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন । সাধারণত এই পরিবর্তনের ফল ভালোই হয় । সুভাষ কলকাতায় এসে বুঝতে পারলেন যে, এখানকার জগত অত্যন্ত জটিল অথচ সম্ভাবনাপূর্ণ ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) ভর্তি হলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজে । সেখানে বেশ কিছু ছাত্রের সঙ্গে দেখা হল । যাদের মনে দেশপ্রেমের আগুন জ্বলছে ।
এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে যায় । এই ঘটনার ফলে সুভাষের জীবনধারা আমূল পরিবর্তন হয়েছিল । ১৯১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ইংরাজী সাহিত্যের অধ্যাপক ইএফ ওটেন একদিন ভারতবর্ষ ও ভারতীয়দের সম্পর্কে অপমানজনক মন্তব্য করেন । ছাত্ররা দাবী করেছিল— ওটেন যেন এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চান । তিনি তা করতে রাজী হলেন না । কলেজে ধর্মঘট পালন করা হল । ধর্মঘটের নেতা ছিলেন সুভাষচন্দ্র । তাঁকে সতর্ক করা হল ।
পরের মাসে আর একটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটল । ওটেন সাহেব প্রথম বার্ষিক এক ছাত্রকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করলেন । এবার ছাত্ররা নিজেদের হাতে আইন তুলে নিল । কলেজের প্রবেশপথে ওটেনকে নির্যাতন করা হল । সুভাষচন্দ্র এই ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ।
সরকার কলেজ বন্ধ করে দিল । একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হল । তদন্ত কমিটি সুভাষকে(Netaji Subhas Chandra Bose) অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে কলেজ থেকে বহিষ্কার করলেন ।
নিজের জীবনের এত বড় পরিবর্তন ঘটে গেলেও ছাত্র প্রতিনিধি হিসাবে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হলে সুভাষ মিথ্যাচার করতে পারল না । জানাল ‘যদিও দৈহিক প্রহার দেওয়ার কাজটি আমি সমর্থন করি না, তবু আমি বলব ছাত্রদের উত্তেজিত হবার যথেষ্ট কারণ ছিল’ । গত কয়েক বছর ধরে প্রেসিডেন্সী কলেজে ব্রিটিশরা কি পরিমাণ অন্যায় করে যাচ্ছে তাও বলতে ছাড়ল না সুভাষ । নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে এসব সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তার কোনো অনুতাপও হল না ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কটকে ফিরে যাওয়া
সুভাষকে বাধ্য হয়ে কটকে ফিরে আসতে হল । কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন । এখন দিন কাটছে অনিশ্চয়তার মধ্যে । তবুও সামাজিক কাজগুলির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন । অবশেষে একবছর বাদে বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের চেষ্টায় ১৯২৭ সালের জুলাই মাসে দর্শনে অনার্স নিয়ে স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তি হলেন সুভাষ । কলেজে নতুন করে পড়াশোনা শুরু করার কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতরক্ষা বাহিনীর একটি শাখায় যোগ দেবার সুযোগ এসে গেল । সুভাষ চারমাস সামরিক শিক্ষা গ্রহণ করলেন ও শিবির–জীবন যাপন করলেন । ১৯১৯ সালে দর্শনশাস্ত্রে অনার্সে প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন সুভাষ ।

নেতাজী সুভাষের আধ্যাত্মিক চিন্তাধারা
সুভাষের বয়স যখন পনেরো বছর, তখন তিনি মানসিক এবং আত্মিক জীবনের সবথেকে ঝঞ্ঝাতাড়িত পর্বে প্রবেশ করেন । মনের ভেতর শুরু হয়েছে তীব্র মানসিক দ্বন্দ্ব । এই দ্বন্দ্বটি ছিল জাগতিক এবং পার্থিব জীবনের মধ্যে সংশয় পরিপূর্ণ ।প্রকৃতি পূজা তাঁকে অনেকখানি সাহায্য করেছিল এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ।
নেতাজীর জীবনে স্বামীজীর প্রভাব
একদিন নেতাজী(Netaji Subhas Chandra Bose) স্বামী বিবেকানন্দের অতীন্দ্রিয় জগতে প্রবেশ করলেন । আকস্মিকভাবে স্বামীজীর রচনাবলীর প্রতি তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় । সমস্ত রাত ধরে তিনি স্বামীজীর লেখা পাঠ করতে থাকেন । পরবর্তীকালে তিনি স্বামীজীর আদর্শে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন । অনেকে তাঁকে স্বামীজীর আরাধ্য কাজ শেষ করার চেষ্টা করেছেন ।
বিবেকানন্দ চর্চা করে সুভাষ এই সিদ্ধান্ত নিলেন যে, নিজের মুক্তির জন্য কাজ করা উচিত নয় । মানবসেবার জন্য নিজের সত্তাকে সম্পূর্ণভাবে উৎসর্গ করতে হবে । ভগিনী নিবেদিতার মতো সুভাষ বিশ্বাস করতেন, মানুষের সেবা বলতে নিজের দেশের সেবাও বোঝায় । কারণ স্বামী বিবেকানন্দের কাছে জন্মভূমিই ছিল তার পূজার প্রতিমা ।
প্রতিটি ভারতবাসীর কথা ভাবতে হবে । সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছোতে হবে । স্বদেশিকতাকে সহায় করতে হবে । পনেরো বছরের কিশোর সুভাষ তখন এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন ।
বিবেকানন্দের তেজস্বীতা, গভীর স্বদেশপ্রাণতা, ভারতকে জগৎসভায় উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা, আত্মজ্ঞান, আত্মশক্তিতে বিশ্বাস ও নির্ভরতা, জীবনে কুমারব্রতের সৃজনীশক্তি– ছাত্রজীবনেই সুভাষচন্দ্রের মানসিক গঠন তৈরি করেছিল । সুভাষ একটি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ যুবগোষ্ঠী সংগঠিত করলেন । পারিবারিক বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেলেন । পরিবারের অনেকে তাঁর এই কাজে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন সুভাষ কিন্তু স্বীয় লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল ।
এই সময় তিনি(Netaji Subhas Chandra Bose) বাড়ি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছিলেন । যোগাভ্যাসে মগ্ন থাকলেন সারাক্ষণ । যে কোনো সন্ন্যাসীর আবির্ভাবের খবর পেলে তার কাছে ছুটে যেতেন । কয়েক মাস ধরে এই ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চলল ৷ ষোলো বছর বয়সের আগে গ্রামীণ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিলেন । বুঝতে পারলেন, গ্রামগুলির উন্নতি না হলে ভারতের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয় ৷
নেতাজী সুভাষের অরবিন্দ ঘোষের সান্নিধ্য
আধ্যাত্মিক অনুপ্রেরণার আদর্শে উদ্ভাসিত সুভাষ সমাজসেবা সম্পর্কে অস্পষ্ট ধ্যান–ধারণা নিয়ে চলতেন । কলকাতায় এসে তিনি বুঝতে পারলেন যে, সমাজসেবা হল মানুষের জীবনের অন্যতম কাজ । ভারতের বিভিন্ন মানুষের সাথে সংযোগ রক্ষা করতে হবে । তাই ভারতের কর্মস্থান এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি ভ্রমণ করতে হবে । এইসময় সুভাষকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন অরবিন্দ ঘোষ । ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে অরবিন্দ বামপন্থী চিন্তাধারা তুলে ধরে ছিলেন । পূর্ণ স্বাধীনতার দাবীও তুলেছেন । সুভাষ অরবিন্দকে জীবনের পথপ্রদর্শক হিসেবে শ্রদ্ধা করেছেন ।
নেতাজী সুভাষের ইন্দ্রদাস বাবাজীর সান্নিধ্য
এক নিদারুণ অহরহ যন্ত্রণায় যখন অস্থির হয়ে উঠেছিলেন সুভাষচন্দ্ৰ, এই সময় ইন্দ্রদাস বাবাজী নামে এক পাঞ্জাবী সাধুর সাথে পরিচয় হল । সুভাষচন্দ্রের মনে হল সন্ন্যাস জীবনের মধ্যেই আছে মুক্তির সন্ধান । ১৯১৪ সালে গুরুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন । ঘুরে বেড়ালেন হরিদ্বার, মথুরা, বৃন্দাবন । কোথাও মনের মত গুরু পেলেন না ।
নেতাজী সুভাষের স্বামী ব্রহ্মানন্দের সান্নিধ্য
গুরু খুঁজতে বেরিয়ে অবশেষে বেনারসে এসে দেখা হল রামকৃষ্ণদেবের শিষ্য স্বামী ব্রহ্মানন্দের সাথে । ব্রহ্মানন্দের সাথে জানকীনাথের পূর্ব পরিচয় ছিল । তিনি সুভাষকে নানাভাবে বুঝিয়ে গৃহে ফেরত পাঠালেন । এর কয়েক দিন পরে টাইফয়েডে শয্যাশায়ী হন । এই অসুস্থতার সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর কর্মজীবন
এইভাবেই কেটে গেল সুভাষচন্দ্রের ছাত্রজীবন । এরপরের ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা আছে । আইসিএস পরীক্ষার জন্য ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন । সেখান থেকে ফিরে এসে দেশবন্ধুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ।
সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন আধ্যাত্মিক চেতনার অধিকারী অপরাজেয় সমাজসেবক ও বহু বিচিত্র কর্মদ্যোগী-কর্মপ্রিয় মানুষ। দেশবন্ধুর সান্নিধ্য গ্রহন করার পরবর্তীতে ওনার নির্দেশে জাতীয় শিক্ষালয়ের অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেন। তার সঙ্গে তিনি পান কংগ্রেস কমিটির সচিবের পদ। এরপর তিনি ‘ফরোয়ার্ড’ পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হন। কলকাতা পৌর নিগমের প্রধান কর্মকর্তা নিযুক্ত হন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক জীবন
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জাতীয় কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন
দেশবন্ধুর পূর্ণ সমর্থনে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ও ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা ও ত্রিপুরাতে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সভাপতি পদ অলংকৃত করেন। সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর দেশগৌরব উপাধি
কলিকাতার পৌরসভার মেয়র হয়ে, এই সময়েই সুভাষচন্দ্র মহাজাতি সদন প্রতিষ্ঠার আয়োজন করেন । ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রকে ‘দেশগৌরব’ উপাধি দেন । সুভাষচন্দ্র কলিকাতার পৌরসভার মেয়র হয়ে অনেক গঠনমূলক কাজ করেছিলেন ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জাতীয় কংগ্রেস দলত্যাগ
গান্ধীজীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত, কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা টীকা এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করেন এবং তাঁর এই আচরণে কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁর প্রতি বিরাগভাজন হয়ে পড়ে ।
সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর অহিংসা এবং সত্যাগ্রহের নীতি ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। এই কারণে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য, কংগ্রেস কমিটি যেখানে ভারতের অধিরাজ্য মর্যাদা বা ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাসের পক্ষে মত প্রদান করে, সেখানে সুভাষচন্দ্রই প্রথম ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে মত দেন। জওহরলাল নেহরুসহ অন্যান্য যুবনেতারা তাকে সমর্থন করেন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ মতবাদ গ্রহণে বাধ্য হয়।
পরবতীতে চরমপন্থী ও নরম পন্থীর মধ্যে বিরোধ দেখে দিলে তিনি কংগ্রেস দল ত্যাগ করেন ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন
কংগ্রেসের মধ্যে থেকেই সুভাষচন্দ্র ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন করে বাংলার বিপ্লবীদলগুলিকে সংগঠিত করার চেষ্টা করলে, কংগ্রেস দল থেকে তাঁকে তিন বছরের জন্য বহিষ্কৃত করা হয় ।
সুভাষচন্দ্র ফরওয়ার্ড ব্লক রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতের মুক্তি ও পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানাতে থাকেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে এগারো বার কারারুদ্ধ করে।
ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি ও তার জীবন রক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ সুভাষচন্দ্র গান্ধী-আরউইন চুক্তি বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। তাকে কারারুদ্ধ করে ভারত থেকে নির্বাসিত করা হয়। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) ভারতে ফিরে এলে আবার তাকে কারারুদ্ধ করা হয়।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose)এর বিখ্যাত উক্তি “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো”। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পরেও তার মতাদর্শের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বরং এই যুদ্ধকে ব্রিটিশদের দুর্বলতাকে সুবিধা আদায়ের একটি সুযোগ হিসেবে দেখেন। যুদ্ধের সূচনালগ্নে তিনি লুকিয়ে ভারত ত্যাগ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান ভ্রমণ করেন ভারতে ব্রিটিশদের আক্রমণ করার জন্য সহযোগিতা লাভের উদ্দেশ্যে।
১৯৪০খ্রিঃ সুভাষচন্দ্র একটি অস্থায়ী জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানান । এই সময় হল ওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের দাবিতে সত্যাগ্রহ শুরু করেন এবং গ্রেপ্তার হন ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর দেশত্যাগ
এই বছরেই কারাগারে অনশন করলে তাকে মুক্তি দিয়ে গৃহে অন্তরীণ অবস্থায় রাখা হয় । অতন্ত্য বিশ্বস্ত কিছু সহযোগীর সহযোগিতায় পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সুভাষচন্দ্র ১৯৪১ খ্রিঃ ২৬শে জানুয়ারি ছদ্মবেশে দেশত্যাগ করেন ৷
উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মধ্য দিয়ে সুভাষচন্দ্র কাবুল হয়ে রাশিয়া হয়ে জার্মানীতে আসেন । এখানে এক শক্তিশালী বেতারকেন্দ্র থেকে তিনি ভারতের উদ্দেশে প্রচারকার্য চালাতে থাকেন ।
ইতিপূর্বে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে মহাবিপ্লবী রাসবিহারী বসু দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এক অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকার গঠন করেছিলেন । তরুণ সুভাষকে তিনি তাঁর আরব্ধ কার্য সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব তুলে দেন । তারপর সুভাষ এক অলৌকিক জীবনযাত্রাকে চোখের সামনে তুলে ধরেছেন । একটির পর একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা সর্ব অর্থেই জনগণমন অধিনায়ক হয়ে উঠেছেন ।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মুক্তি যুদ্ধ
তৎকালীন সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাতাবরণ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী ইংরেজদের প্রতি বিরোধিতার বীজ বপন করতে চাইলেন। ইংরেজ সরকার সুভাষচন্দ্রকে আসন্ন মূর্তিমান বিপদ ভেবে নজরবন্দি করে । ইংরেজ রক্ষীদের চোঁখে ধুলো দিয়ে তিনি দিলেন বিদেশে পাড়ি।

জাপানে পৌঁছে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক পদ গ্রহণ করেন ও জাপানিদের সহযোগিতায় তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ পুনর্গঠন করেন এবং আরো শক্তিশালী করে গড়ে তোলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং ‘দিল্লি চলো’ শ্লোগানের মাধ্যমে দিল্লির লালকেল্লা দখলের উদ্দেশ্য কার্যত ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৪৪ সালে ইমফলে আজাদ হিন্দ ফৌজের চেষ্টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন
আজাদ হিন্দ বাহিনীর সৈনিকেরা ছিলেন মূলত ভারতীয় যুদ্ধবন্দি এবং ব্রিটিশ মালয়, সিঙ্গাপুরসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে কর্মরত মজুর। জাপানের আর্থিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক সহায়তায় তিনি নির্বাসিত আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্বদান করে ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে ইম্ফল ও ব্রহ্মদেশে(বর্তমান মায়ানমার) যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসি ও অন্যান্য যুদ্ধবাদী শক্তিগুলির সঙ্গে মিত্রতা স্থাপনের জন্য কোনো কোনো ঐতিহাসিক ও রাজনীতিবিদ সুভাষচন্দ্রের সমালোচনা করেছেন । এমনকি কেউ কেউ তাকে নাৎসি মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বলে অভিযুক্ত করেছেন। তবে ভারতে অন্যান্যরা তার ইস্তাহারকে রিয়েলপোলিটিক(নৈতিক বা আদর্শভিত্তিক রাজনীতির বদলে ব্যবহারিক রাজনীতি)-এর নিদর্শন বলে উল্লেখ করে তার পথপ্রদর্শক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবাদর্শের প্রতি সহানুভূতি পোষণ করেছেন।
পরবর্তীতে বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় ঘটলে ফলস্বরূপ অর্থ কষ্টে আজাদ-হিন্দ-বাহিনীর ভগ্নদশা দেখা দিলে নেতাজী তাইহুকু বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেন সাহায্যের আশায়।
আমরা মহান এই বিপ্লবীকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি । আর অবাক হয়ে ভাবি, কী অকুতোভয় সাহস এবং তেজের প্রতীক ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) । তা না হলে এইভাবে কেউ অসম যুদ্ধে জয়লাভ করার স্পর্ধা দেখাতে পারেন!
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্য
নেতাজি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই, তাঁর মৃত্যু ঘিরে কত না রহস্যের ঘনঘটা । তবুও প্রতিবছর ২৩শে জানুয়ারি তার জন্ম মুহূর্তে শঙ্খধ্বনি করা হয় ।
জাপানের তাইহুকু বিমান বন্দর থেকে যাত্রা করার পর নেতাজীর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাই অনেক দেশবাসীর মধ্যে মৃত্যু সংবাদ নিয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। জাপান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় বিমান দুর্ঘটনা ওনার মৃত্যু হয়েছে। কেউ বলেন নেতাজী জীবিত তাকে সাইবেরিয়ার জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। নেতাজীর মৃত্যু সম্বন্ধে ভারত সরকার কমিশন গঠন করলেও নেতাজীর মৃত্যু রহস্য যে তিমিরে ছিল সে বিন্দুতে রয়ে গেছে। তাই আমাদের কাছে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু চির অমর নিরুদেশের পথিক।
এভাবেই সুভাষচন্দ্র আমাদের মনের মণিকোঠায় চির উজ্জ্বল হয়ে বেঁচে আছেন । শেষ জীবনটি রহস্যাবৃত অবস্থায় কেটে গেছে বলেই বোধহয় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু(Netaji Subhas Chandra Bose) হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তির মহানায়ক ।
পুরস্কার ও সম্মাননা

ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক প্রতিটি ক্ষেত্রেই পেয়েছেন প্রভূত অভ্যর্থনা।
১) ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতা নেতাজী সুভাষ বিমান বন্দরের নামকরন করা হয়েছে।
২) তার জন্মদিবস উপলক্ষে বর্তমান ক্ষমতাধীন নরেন্দ্র মোদি সরকার এই দিনটিকে ‘জাতীয় পরাক্রম দিবস’ বলে ঘোষণা করেছেন।
নেতাজীর বিখ্যাত উক্তি
১) “তোমরা আমাকে রক্ত দাও,
আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব।”
২) “দিল্লী চলো”
Frequently Asked Quedtions
Q1:নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম কবে হয় ?
Ans: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম হয় ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ।
Q2:নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর পিতার নাম কী ?
Ans: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর পিতার নাম জনকীনাথ বসু ।
Q3:নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম কী ?
Ans: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম প্রভাবতী দত্ত।
Q4:নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম কোথায় হয় ?
Ans: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম হয় উড়িষ্যার কটক শহরে ।
Q5:নেতাজী কী দল গঠন করেন ?
Ans: নেতাজী ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন ।
Q6:নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক দলের নাম কী ?
Ans: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক দলের নাম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ।
Q7:নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সন্তানের নাম কী ?
Ans: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর সন্তানের নাম অনিতা বসু পাফ ।
Q8:নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর স্ত্রীর নাম কী ?
Ans: নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর স্ত্রীর নাম এমিলি সেঙ্কল।
Q9:ছাত্র জীবনে নেতাজীর রাজনৈতিক আদর্শ কে ছিলেন ?
Ans: তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক বেনিমাধব দাস।
Q10: আজাদ হিন্দ সরকারের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন ?
Ans: বীর বিপ্লবী রাসবিহারী বসু । নেতাজী পরবর্তীতে সেই সরকারের দায়িত্ব গ্রহন করেন ও শক্তিশালী করে তোলেন ।
এই লেখাটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । আশাকরি ভালো লেগেছে । ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের পাঠিয়ে দেবেন । তারাও আপনার মাধ্যমে লেখাটি পড়তে পারবে ও অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে । এই ধরনের আরও লেখা পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি সাবক্রাইব করে রাখবেন । লেখার মান কেমন হল কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না । কোনও পরামর্শ বা তথ্য দেওয়ার থাকলে তাও কমেন্টে জানাবেন । ধন্যবাদ ।
It’s very nice.