রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali 2023

Table of Contents

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali

বাংলা সাহিত্য জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে যদি কেউ থেকে থাকেন তাহলে সেটা অবশ্যই আমাদের সকলের প্রিয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) কোনো পরিচয়ের অপেক্ষা রাখেন না। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, লেখক, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক।

সুইডিশ অ্যাকাডেমি কর্তৃক নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত হন এবং তিনিই এশিয়ার প্রথম ব্যক্তি তথা প্রথম বাঙালী যিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। তাঁর লেখা অসাধারণ সব কবিতা ও গান, আজও প্রত্যেকটা বাঙালীর সমানভাবে মন কাড়ে ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা ‘গীতাঞ্জলি’ এবং ‘জীবন স্মৃতি’ আজও বাঙালির মনে চির স্মরণীয়।এই বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই একমাত্র লেখক যার লেখা দুটি রচনা ভারত ও বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নিয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) কে ছিলেন ?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore)  ছিলেন বাঙ্গালী কবি, নাট্যকার, গল্পকার, চিত্রকর, অভিনেতা, দার্শনিক, অভিনেতা, ছোটো গল্পকার । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে কবিগুরু, বিশ্বকবি ও গুরুদেববিভিন্ন নামে ভূষিত করা হয়। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ  করেন । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন সকল দেশের সকল কালের এবং সকল মানবের তীর্থভূমি ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম

Rabindranath Tagore

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাব হয়েছিলো ১৮৬১ খ্রি: ৭ই মে বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর এক অভিজাত ব্রাহ্মন(ঠাকুর) পরিবারে । উনিশ শতকের সাহিত্য–সংস্কৃতির পীঠস্থান ছিলো এই ঠাকুর পরিবার । জন্ম ও মৃত্যু স্থান কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত। এখন কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মাতা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মায়ের নাম সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫)। সারদাসুন্দরী দেবী ছিলেন একজন স্নেহময়ী মহিলা । রবীন্দ্রনাথের পিতামহের নাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর । তিনি একজন বিত্তশালী জমিদার ও জনহিতৈষী ছিলেন । ঠাকুর পরিবারের শিক্ষা–দীক্ষা, মার্জিত সাংস্কৃতিক চেতনা ও পিতার আলোকিত ধর্মবিশ্বাস কবির মধ্যে মূর্ত হয়ে উঠেছিলো ।

 রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পিতা-মাতার অষ্টম পুত্র । রবীন্দ্রনাথের(Rabindranath Tagore) প্রায় ১৪ বছর বয়সকালে তার মাতা সারদাদেবীর মৃত্যু হয় । 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইবোন

সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বর্ণকুমারী দেবী, পূণ্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সোমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, বীরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সৌদামিনী ঠাকুর, বর্ণকুমারী ঠাকুর, শরৎকুমারী ঠাকুর, ভুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং ঠাকুরদাদা ঠাকুর । মোট ভাইবোন ১৩ জন । তিনি ছিলেন পিতা মাতার ১৪তম সন্তান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশবকাল

শিশুকাল থেকেই ঠাকুর পরিবারের অন্যান্য সন্তানদের মতো রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) অভিজ্ঞ পরিচারকদের দ্বারা লালিত-পালিত হন । একজন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এবং কয়েকজন গৃহশিক্ষকের কাছে তার প্রাথমিক বিদ্যালাভ শুরু হয় । বিভিন্ন স্কুলেও পড়েন কিছুদিন । কিন্তু স্কুলের বাঁধাধরা নিয়ম ও আবহাওয়া তার মনঃপুত না হওয়ায় বাড়িতেই পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হয় । বাড়িতেই বিশ্ববিদ্যার সকল দুয়ার তার সম্মুখে উন্মুক্ত হয়ে গেল ।

শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন । কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা একেবারেই পছন্দ করতেন না। তাই তিনি প্রায়শই স্কুল থেকে পালিয়ে যেতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থা আজকের ব্যবস্থার চেয়ে অনেক উন্নত ছিল।

বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল । রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) বাড়িতে অনেক কিছু শিখেছিলেন, যেমন – কুস্তি, শিল্প, ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য, গণিত, সংস্কৃতি এবং ইংরেজি। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিল তাঁর আরেক ভাই হরেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর সন্তানদের ইংরেজি ও সঙ্গীত শেখার জন্য উৎসাহিত করতেন। তাই তাঁর বাবা বাড়িতে কয়েকজন সংগীতজ্ঞ নিয়োগ করেছিলেন।

ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের(Rabindranath Tagore) পারিবারিক পরিচয়

Rabindranath Tagore কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি তিনি একটি বুদ্ধিজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পরিবারের সবাই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভার অধিকারী।

তাঁর পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর “ব্রাহ্মসমাজ” দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাই তিনি আধ্যাত্মিক পথ বেছে নিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৩ জন ভাইবোন ছিল এবং তিনি ছিলেন চতুর্থ জীবিত পুত্র।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ ভাই দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন কবি এবং দার্শনিক। তাঁর দ্বিতীয় বড় ভাই সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম ভারতীয় এবং অ-ইউরোপীয় যিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের জন্য নির্বাচিত হন।

তাঁর আরেক বড় ভাই জ্যোতিন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ও নাট্যকার। স্বর্ণকুমারী নামে তাঁর একটি বোনও ছিল, যিনি ছিলেন একজন উপন্যাসিক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে ৯ বছর বয়সী কাদম্বরী দেবীর বিয়ে হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং কাদম্বরী দেবীর বয়স প্রায় সমান ছিল। এই কারণেই তারা বেশিরভাগ সময় একসাথে কাটাতেন। বলা হয় কাদম্বরী দেবী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমে পড়েছিলেন। তাই ১৮৮৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ের পর কাদম্বরী দেবী আত্মহত্যা করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা

১৮৭৩ সালে এগারো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের(Rabindranath Tagore) উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তারা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ যান পাঞ্জাবেরই(অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত) ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায় ।  এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। অল্প বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথের কবিপ্রতিভার উন্মেষ হয় । কিশোর কাল থেকেই শুরু করলেন নিরবচ্ছিন্ন কাব্যচর্চা । মাত্র তেরো বছর বয়সেই তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের(Rabindranath Tagore) বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে আইনজীবী হবে। এই কারণেই ১৮৭৮ সালে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংল্যান্ডের পূর্ব সাসেক্সের ব্রাইটনে একটি পাবলিক কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি আইন অধ্যয়নের জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনে ভর্তি হন। কিন্তু প্রথাগত শিক্ষায় আগ্রহের অভাবের জন্য তিনি পড়াশোনা ছেড়ে দেন এবং নিজের চেষ্টায় শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন কাজ শিখতে শুরু করেন। তিনি ইংরেজি, আইরিশ এবং স্কটিশ সাহিত্য ও সঙ্গীতের সারমর্মও শিখেছিলেন।

সেখানে স্বল্পকাল অবস্থানের পরে পাশ্চাত্য জীবনাচরণ,  সেখানকার সাহিত্য–সংস্কৃতির খবর ও পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সুরমূর্ছনা নিয়ে ১৮৮০ সালে দেড় বছর পর তিনি কোনো ডিগ্রি ছাড়াই বাংলায় ফিরে আসেন। বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের প্রেরণায় এবার কবির প্রাণে এলো গানের জোয়ার । রচনা করলেন অনবদ্য গীতিনাট্য ‘বাল্মিকী প্রতিভা’ । ১৮৮২ সালে ‘রুদ্র চক্র’ এবং ‘সন্ধ্যা সঙ্গীত’ নামে দুটি শ্লোক নাটক প্রকাশ করেন ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের(Rabindranath Tagore) যৌবনকাল

Rabindranath Tagore

১৮৭৮ খ্রীষ্টাব্দে তার(Rabindranath Tagore) প্রথম বই ‘কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয় । তারপর একে একে প্রকাশিত হতে থাকে সন্ধ্যাসঙ্গীত, প্রভাত সঙ্গীত, ছবি ও গান, কড়ি ও কোমল, মানসী, সোনার তরী কাব্যসমূহ । তারপর বের হলো চিত্রা, চৈতালী, কণিকা, কল্পনা, কথা ও কাহিনী, নৈবেদ্য, খেয়া, গীতাঞ্জলি, গীতালি ইত্যাদি । 

শুধু কাব্যই নয়, নাটক, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, রসরচনা, সমালোচনা, রূপক নাটক, শিশুসাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজতত্ব, শিক্ষাতত্ব, সঙ্গীত, স্কুলপাঠ্য, ভ্রমণকাহিনী, সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সব ক্ষেত্রেই তার স্বচ্ছন্দ বিচরনের ফলে ফলাফল হলো বাংলা সাহিত্যের বর্তমান চরম উৎকর্ষ সাধন ও উন্নতি । তিনি প্রায় দু’হাজারের মতো ছবিও এঁকেছেন ।

 ১৯১২ সালে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় লন্ডনের ইন্ডিয়া সোসাইটি থেকে । সঙ্গে সঙ্গে প্রাশ্চাত্যের বিদগ্ধ সমাজে সাড়া পড়ে যায় । আইরিশ কবি ডব্লিউ. বি. ইয়েস ইংরেজি গীতাঞ্জলির ভূমিকা লেখেন ।

 ১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশরাজ কবিগুরুকে(Rabindranath Tagore) ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত করেন । ১৯১৯ খ্রীঃ জালিওয়ালাবাগে নিরস্ত্র ভারতীয়দের ব্রিটিশ সৈন্যরা নির্মমভাবে হত্যা করলে তার প্রতিবাদে তিনি ঐ উপাধি পরিত্যাগ করেন ।

 রবীন্দ্রনাথ(Rabindranath Tagore) ইউরোপ, আমেরিকা, চীন, জাপান, রাশিয়া, মালয়, পারস্য প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেন এবং এইসব দেশে বহু বক্তৃতা ও রচনা পাঠ করেন । পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষাতেই তাঁর রচনা প্রকাশিত হয়েছে । বিশ্বের সকল দেশের বিদগ্ধ মানুষ, কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবীরা তাঁকে মনীষী হিসাবে শ্রদ্ধা করেন ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্ম জীবন

ভারতী পত্রিকায় ১৮৭৭ সালে, মাত্র ১৬ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশ করেন। সেগুলো ছিলো ভানুসিংহের পদাবলী, মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা আর ভিখারিণী ও করুণা নামে দুটো সুন্দর ছোটগল্প। এগুলোর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘কবিকাহিনী’। এছাড়াও পরে তিনি রচনা করেছিলেন ‘সন্ধ্যাসংগীত’ নামক আরেকটি কাব্যগ্রন্থ। ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ নামে লেখা তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থেরই অন্তর্গত ছিলো।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহ

Rabindranath Tagore

ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে আসার পর, অবশেষে ১৮৮৩ সালে ৯ই ডিসেম্বর(বাং ২৪শে অগ্রহায়ন, ১২৯০) তারিখে রবীন্দ্রনাথের বিয়ে হয় বেণীমাধব রায়চৌধুরী নামে ঠাকুরবাড়ির এক অধস্তন কর্মচারীর ১০ বছর বয়সী কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে । বিয়ের সময় ভবতারিণীর পুণরায় নামকরণ করা হয় এবং তাঁর নাম পাল্টে রাখা হয় মৃণালিনী দেবী(১৮৭৩-১৯০২) ।

পরবর্তীকালে, মৃণালিনী দেবী ও রবীন্দ্রনাথের মোট পাঁচ সন্তান হয় । তাঁদের নাম যথাক্রমে ছিলো- মাধুরীলতা(১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ(১৮৮৮–১৯৬১),  রেণুকা(১৮৯১–১৯০৩),  মীরা(১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ(১৮৯৬–১৯০৭) ।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথ মারা যায় । দুঃখজনক সময় ১৯০২ সালে তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবী এবং কিছুকাল পরে তার দুই সন্তান মারা যায়। ১৯০৫ সালে তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরও মারা যান।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মধ্য জীবন

 ১৯০১ খ্রীষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore) শান্তিনিকেতনে একটি আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন করেন । দেশী-বিদেশী বহু জ্ঞানী–গুণী ব্যক্তিত্ব এখানে শিক্ষকতা করতেন । আজ তা বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রূপে খ্যাত ।

 তাঁর রচিত দুটি সঙ্গীত ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ এবং ‘আমার সোনার বাংলা’ যথাক্রমে ভারতের এবং বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতরূপে গৃহিত ও সমাদৃত । 

রবীন্দ্রনাথ তাঁর জমিদারী পরিচালনার জন্য দীর্ঘদিন বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার শিলাইদহে কাটিয়েছেন । তাঁর ‘সোনার তরী’ কাব্যগ্রন্থ এবং বহু ছোটগল্পের রচনার পটভূমি এই শিলাইদহ ।

 ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার নোবেল পুরস্কার লাভ করেন । তিনিই নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয় এবং প্রথম এশিয়াবাসী ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের(Rabindranath Tagore) শেষজীবন

 জীবনের শেষ চার বছর ছিল তার ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাঁকে। জানাজায় ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেন নি।

এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন।

দীর্ঘ রোগভোগের ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দের ৭ই আগষ্ট বিশ্বকবি মহামনীষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা, জোড়াসাঁকোয় মহাপ্রয়াণে যাত্রা করেন । ২৫শে বৈশাখের সূর্য(রবি) ২২শে শ্রাবণের সন্ধ্যায় অস্ত যায়।

মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিলো প্রায় ৮০ বছর ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাধিস্থল, নিমতলা মহাশ্মশান, কলকাতা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম

সারা বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) মূলত একজন কবি হিসেবে বিখ্যাত। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্যরচনা শুরু করেন। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার(১৯১৫টি) গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ নামে ৩২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী ‘রবীন্দ্রনৃত্য’ নামে পরিচিত।নিম্নে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্মের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হলঃ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা সমগ্র

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) তাঁর কর্ম জীবনে অজস্র কবিতা রচনা করেছেন। কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা। এছাড়াও অনেক কাব্যে গল্প-কবিতার আকারে তিনি নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরেন।

তাঁর(Rabindranath Tagore) কয়েকটি কয়েকটি কাব্যগ্রন্থ হল- কবি-কাহিনী(১৮৭৮), বনফুল(১৮৮০), ভগ্নহৃদয়(১৮৮১), সন্ধ্যা সঙ্গীত(১৮৮২), প্রভাতসংগীত(১৮৮৩), ছবি ও গান(১৮৮৪), কড়ি ও কোমল(১৮৮৬), মানসী(১৮৯০), সোনার তরী(১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি(১৮৯৬), কল্পনা(১৯০০), ক্ষণিকা(১৯০০), নৈবেদ্য(১৯০১), খেয়া(১৯০৬), গীতাঞ্জলি(১৯১০), গীতিমাল্য(১৯১৪), গীতালি(১৯১৪), বলাকা(১৯১৬), পলাতকা(১৯১৮), পূরবী(১৯২৫), মহুয়া(১৯২৯), পুনশ্চ(১৯৩২), শেষ সপ্তক(১৯৩৫), পত্রপুট(১৯৩৬), শ্যামলী(১৯৩৬), রোগশয্যায়(১৯৪০), আরোগ্য(১৯৪১), জন্মদিনে(১৯৪১), শেষ লেখা(১৯৪১, মরণোত্তর প্রকাশিত)

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) শেষ কবিতা “তোমার সৃষ্টির পথ” যা তিনি মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে রচনা করেছিলেন।

বহির্বিশ্বে তার সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি (Rabindranath Tagore) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প

সমগ্র বাংলা ছোটগল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) অবদান অপরিসীম। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার। তিনি তাঁর ছোট গল্পে সাধারণত আসে পাশের ঘটনাবলি ও আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব মতামত প্রকাশ করতেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কয়েকটি ছোট গল্প হলঃ ভিখারিনী(১৮৭৭), খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন(১৮৯১), কঙ্কাল(১৮৯১), নিশীথে(১৮৯৪), মণিহারা(১৮৯৮), ক্ষুধিত পাষাণ(১৮৯৫), স্ত্রীর পত্র(১৯১৪), নষ্টনীড়(১৯০১), কাবুলিওয়ালা(১৮৯২), হৈমন্তী(১৯১৪), দেনাপাওনা(১৮৯১), পোস্টমাস্টার(১৮৯১), মাস্টারমশাই(১৯০৭)।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore) রচিত বিভিন্ন ছোট গল্প অবলম্বনে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। যেমন– সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘তিন কন্যা’(১৯৬১, মনিহারা, পোস্টমাস্টার ও সমাপ্তি অবলম্বনে) ও ‘চারুলতা’ (১৯৬৪, নষ্টনীড় অবলম্বনে), তপন সিংহ পরিচালিত ‘অতিথি’ (১৯৬৫), ‘কাবুলিওয়ালা’(১৯৫৭) ও ‘ক্ষুধিত পাষাণ’(১৯৬০), পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত ‘স্ত্রীর পত্র’।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস রচনা

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) তাঁর সাহিত্য জীবনে মোট ১৩ টি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হলঃ বৌ-ঠাকুরাণীর হাট(১৮৮৩), রাজর্ষি(১৮৮৭), চোখের বালি(১৯০৩), নৌকাডুবি(১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ(১৯০৮), গোরা(১৯১০), ঘরে বাইরে(১৯১৬), চতুরঙ্গ(১৯১৬), যোগাযোগ(১৯২৯), শেষের কবিতা(১৯২৯), দুই বোন(১৯৩৩), মালঞ্চ(১৯৩৪), চার অধ্যায়(১৯৩৪)।

রবীন্দ্রনাথের(Rabindranath Tagore) প্রথম উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা হল ‘বৌ-ঠাকুরাণীর হাট’ ও ‘রাজর্ষি’ । ‘বৌ-ঠাকুরাণীর হাট’ ও ‘রাজর্ষি’ ঐতিহাসিক উপন্যাস। ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে দেখানো হয়েছে সমসাময়িককালে বিধবাদের জীবনের নানা সমস্যা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত উপন্যাস অবলম্বনে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। যেমন– সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘ঘরে বাইরে’(১৯৮৪), ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত ‘চোখের বালি’(২০০৩)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রবন্ধ সমূহ

গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) তাঁর সাহিত্য অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। প্রবন্ধ গুলিতে তিনি সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি, সাহিত্য, ইতিহাস, ভাষাতত্ব, সংগীত ইত্যাদি বিষয়ে তাঁর মতামত প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর প্রবন্ধ গুলি বিভিন্ন সংকলনে এখনও পর্যন্ত ১৯ টি খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এমন কয়েকটি সংকলন হলঃ সমাজ(১৯০৮), কালান্তর(১৯৩৭), ধর্ম(১৯০৯), শান্তিনিকেতন(১৯০৯-১৬), ভারতবর্ষ(১৯০৬), ইতিহাস(১৯৫৫), সাহিত্য(১৯০৭), সাহিত্যের পথে(১৯৩৬), সাহিত্যের স্বরূপ(১৯৪৩), প্রাচীন সাহিত্য(১৯০৭), আধুনিক সাহিত্য(১৯০৭), লোকসাহিত্য(১৯০৭), শব্দতত্ত্ব(১৯০৯), বাংলাভাষা পরিচয়(১৯৩৮), ছন্দ(১৯৩৬), সংগীতচিন্তা(১৯৬৬), শিক্ষা(১৯০৮), ন্যাশনালিজম(Nationalism, ১৯১৭), রিলিজিয়ন অফ ম্যান(Religion of Man, ১৯৩০) মানুষের ধর্ম( ১৯৩৩) সভ্যতার সংকট(১৯৪১), বিশ্বপরিচয়(১৯৩৭), জীবনস্মৃতি(১৯১২), ছেলেবেলা(১৯৪০), আত্মপরিচয়(১৯৪৩)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্রসাহিত্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) পত্রসাহিত্য মোট ১৯ টি খন্ডে প্রকাশিত হয়েছিল। এমন কয়েকটি পত্রসাহিত্য হলঃ ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলী(১৮৮৭-১৮৯৫), ভানুসিংহের পত্রাবলী(১৮৮৪), পথে ও পথের প্রান্তে(১৯২৯-১৯৩০)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতিনাট্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) ছিলেন একাধারে নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা। তিনি বেশ কয়েকটি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন। এমন কয়েকটি গীতিনাট্য হল: বাল্মীকিপ্রতিভা(১৮৮১), কালমৃগয়া(১৮৮২)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) গীতিনাট্য রচনার পর কয়েকটি কাব্যনাট্য রচনা করেন। সেগুলি হলঃ রাজা ও রাণী(১৮৮৯), বিসর্জন(১৮৯০), চিত্রাঙ্গদা(১৮৯২), মালিনী(১৮৯৬)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রহসন রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) কাব্যনাট্যের পর প্রহসন রচনা শুরু করেন। এমন কয়েকটি প্রহসন রচনা হলঃ গোঁড়ায় গলদ(১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা(১৮৯৭), হাস্যকৌতুক(১৯০৭), ব্যঙ্গকৌতুক(১৯০৭)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যরচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের(Rabindranath Tagore) নাটকের তালিকা ১৯০৮ সালের পর থেকে । রবীন্দ্রনাথ রূপক-সাংকেতিক তত্ত্বধর্মী নাট্যরচনা শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথের এমন কয়েকটি রূপক-সাংকেতিক নাট্যরচনা হলঃ শারদোৎসব(১৯০৮), রাজা(১৯১০), ডাকঘর(১৯১২), অচলায়তন(১৯১২), ফাল্গুনী(১৯১৬), মুক্তধারা(১৯২২), রক্তকরবী(১৯২৬), তাসের দেশ(১৯৩৩), কালের যাত্রা(১৯৩২), প্রকৃতির প্রতিশোধ(১৮৮৪) ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বেশ কয়েকটি পুরোনো নাটক শান্তিনিকেতনে ছাত্র ছাত্রীদের অভিনয়ের সুবিধার্থে সংক্ষিপ্ত আকারে লিখে নতুন নামে প্রকাশ করেন। এমন কয়েকটি নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ হলঃ ঋণশোধ(১৯২১, ‘শারদোৎসব’ নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ), অরূপরতন(১৯২০, ‘রাজা’ নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ), গুরু(১৯১৮, ‘অচলায়তন’ নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ), শেষরক্ষা(১৯২৮, ‘গোঁড়ায় গলদ’ নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ), তপতী(১৯২৯, ‘রাজা ও রাণী’ নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ), পরিত্রাণ(১৯২৯, ‘প্রায়শ্চিত্ত’ নাটকের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ) ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাট্যাভিনয়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘হঠাৎ নবাব’নাটকে ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই  ‘অলীকবাবু’ নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮১ সালে তার প্রথম গীতিনাট্য বাল্মীকিপ্রতিভা মঞ্চস্থ হয়।এই নাটকে তিনি ঋষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয়  করেছিলেন। 

Rabindranath Tagore

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য

১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(Rabindranath Tagore) ‘নটীর পূজা’ নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন। পরে নাচ ও গানের সঙ্গে পরিবেশিত নাটক ‘নৃত্যনাট্য’ নামে পরিচিতি লাভ করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এমন কয়েকটি নৃত্যনাট্য হলঃ নটীর পূজা(১৯২৬), শাপমোচন(১৯৩১), তাসের দেশ(১৯৩৩), নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা(১৯৩৬), নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা(১৯৩৮), শ্যামা(১৯৩৯)।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগীত রচনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীত, বাংলা লোকসংগীত ও ইউরোপীয় সংগীত– এই তিন ধরণের সংগীতের সংমিশ্রণ করে এক নতুন ধরণের শৈলীর জন্ম দেন যা ‘রবীন্দ্র সংগীত’ নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫টি গান রচনা করেছিলেন। তাঁর রচিত সব গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে।

কয়েকটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় গান হলঃ

১) ও আমার দেশের মাটি, তোমার পায়ে ঠেকাই মাথা…

২) যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তব একলা চলো রে…

৩) যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে…

৫) সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুল ডোরে বাঁধা দুজনা…

৫) আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে…  ইত্যাদি ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রবীন্দ্রনৃত্য

সংগীতের মতোই রবীন্দ্রনাথ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে এক নতুন নৃত্যশৈলীর প্রবর্তন করেন। এই নতুন শৈলীটি “রবীন্দ্রনৃত্য” নামে পরিচিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রকলা

ছবি আঁকতে রবীন্দ্রনাথের কোনো প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। তিনি যে সমস্ত ছবি ও স্কেচ এঁকেছিলেন তা নিজের চেষ্টাতেই এঁকেছিলেন। তিনি ২৫০০ এর বেশি ছবি এঁকেছিলেন এবং এর মধ্যে ১৫৭৪ টি ছবি শান্তিনিকেতনে সংরক্ষন করা আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ছবি গুলো ফ্রান্সের প্যারিস শহরের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছিল। এর পর সারা ইউরোপে তাঁর আঁকা ছবি প্রদর্শিত হয়।

শান্তিনিকেতন ও বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক বছর আগে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে, এক বিশাল জমি কেনেন । সেখানে তিনি ১৮৮৮ সালে একটা আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটা ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ।

Rabindranath Tagore

বাবার সেই কেনা জমিতে রবীন্দ্রনাথ একটা শিক্ষাকেন্দ্র তৈরী করতে চেয়েছিলেন । তাই প্রথমে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন ‘পাঠ্য ভবন’ নামে একটা স্কুল,  যেটা বাকি সব স্কুলের থেকে বেশ আলাদা ছিলো । কারণ সেই স্কুল ছিলো সম্পূর্ণ খোলা আকাশের নীচে একটা গাছের তলায় ।

পরে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি সেই স্কুলকে আরো বিস্তৃত করার উদ্দেশ্যে সেটাকে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করেন । ২৩ ডিসেম্বর ১৯২১ সালে তিনি “বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় চালানোর জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বইয়ের কপিরাইট এমনকি তাঁর স্ত্রীর গয়নাও বিক্রি করেছিলেন। তিনি সারাজীবন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন, এর জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন, নাটকও করেছেন।

সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে তিনি আবার ১৯২৪ সালে আরেকটি শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন যেটা ছিলো ‘শিক্ষা সত্র’ । তিনি এই প্রতিষ্ঠান মাত্র ৭ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে শুরু করেছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন। নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি’।

রবীন্দ্রনাথের “চিত্ত যেথা ভয়শূন্য” ও “একলা চলো রে” রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ‘একলা চলো রে’ গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল।যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। হিন্দু নিম্নবর্ণীয় জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও আম্বেডকরের যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়, তা নিরসনেও রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও তার অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন।

Rabindranath Tagore

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সর্বদা জাতীয়তাবাদকে সমর্থন করেছেন। দেশপ্রেম ভাবনা থেকেই তিনি নাইট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আতিথেয়তায় মহাত্মা গান্ধী এসেছিলেন । ১৯৪০ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনোই অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে আমরা কাউকে সম্পূর্ণভাবে বয়কট করতে পারি না। আমরা তাদের কাছ থেকে শিক্ষা, বিজ্ঞানের মতো কিছু শিখতে পারি। এখানেই গান্ধীজির চিন্তা ও ঠাকুরের চিন্তা মেলে নি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা দর্শন ও শিক্ষা চিন্তা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থাকে শ্রেয় বলে মনে করতেন। তিনি তাঁর “তোতা-কাহিনী” গল্পে মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর পড়াশোনার তীব্র ভর্তসনা করেছেন। “তোতা কাহিনী” গল্পে একটি খাঁচাবদ্ধ পাখির রূপক ব্যবহার করে দেখিয়েছিলেন কিভাবে বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থা ছাত্র সমাজকে নিরস মুখস্ত বিদ্যার মাধ্যমে বৌদ্ধিক মৃত্যুর পথে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি ভারতের প্রাচীন শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন– যেখানে গাছের নিচে পড়ানো হবে, শিক্ষার্থীদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেওয়া হবে এবং শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর ধরে ব্রহ্মচর্য পালন করবে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেন এবং শান্তিনিকেতনকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশের গন্ডির বাইরে একটি বিশ্ব শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের চিন্তা ভাবনা শুরু করেন ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমাজ দর্শন

তিনি নিরীহ মানুষের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন এবং ব্রিটিশদের অত্যাচারী নীতিরও বিরোধিতা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃষকদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এবং কৃষকদের সমর্থন করেছেন। তিনি মহাত্মা গান্ধীর মতো সহিংসতারও বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানবতাই সবচেয়ে বড় জিনিস যা যুদ্ধ শেষ করতে পারে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিশ্ব ভ্রমণ

১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট ১২ বার বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন এবং ৩০ টির বেশি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি ভ্রমণ করেছিলেন – ইংল্যান্ড, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, চীন, আর্জেন্টিনা, পেরু, মেক্সিকো, ইতালি, গ্রিস, তুরস্ক, মিশর, বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া, ইরাক, পারস্য, সিংহল।

রবীন্দ্রনাথ যে সকল বইতে তার বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতাগুলি লিপিবদ্ধ করে রাখেন সেগুলি হলঃ ইউরোপ-প্রবাসীর পত্র(১৮৮১), ইউরোপ-যাত্রীর ডায়রি(১৮৯১, ১৮৯৩), জাপান-যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী(পশ্চিম-যাত্রীর ডায়রি ও জাভা-যাত্রীর পত্র, ১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি(১৯৩১), পারস্যে(১৯৩৬) ও পথের সঞ্চয়(১৯৩৯)।

এই সব দেশে তিনি আইনস্টাইন থেকে শুরু করে অনেক বিখ্যাত মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মকে বাংলা ভাষা বোঝেন না এমন লোকদের মাঝে নিয়ে যান। পেরু ও মেক্সিকো উভয় দেশের সরকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার অর্থসাহায্য প্রদান করেছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান সমূহ

  • বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় : ১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের একটি কেন্দ্রীয়  বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার বোলপুর শহরে অবস্থিত। 
  • রবীন্দ্র সেতু: রবীন্দ্র সেতু(পূর্বনাম হাওড়া ব্রিজ) হুগলি নদীর উপর অবস্থিত কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম হল রবীন্দ্র সেতু। ১৮৭৪ সালে প্রথম হাওড়া সেতু নির্মিত হয়। পরে ১৯৪৫ সালে পুরনো সেতুটির বদলে বর্তমান বহির্বাহু সেতুটির উদ্বোধন হয়। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন সেতুটির নাম পরিবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে রবীন্দ্র সেতু রাখা হয়।
  • রবীন্দ্রসদন: পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত একটি ঐতিহ্যবাহী সরকারি প্রেক্ষাগৃহ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হল রবীন্দ্রসদন(পূর্বনাম রবীন্দ্রস্মরণী) । এটি দক্ষিণ কলকাতার নন্দন-রবীন্দ্রসদন সাংস্কৃতিক চত্বরে অবস্থিত।
  • রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়:  কলকাতার একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬২ সালের ৮ মে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল এই বিশ্ববিদ্যালয়।

রবীন্দ্রনাথের পুরষ্কার এবং সম্মানসমূহ

  • ১৯৪০ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে শান্তিনিকেতনে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে “ডক্টরেট অব লিটারেচার” সন্মানে ভূষিত করে ।
  • ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে “ডক্টর অফ লিটারেচার” ডিগ্রি দিয়ে সম্মানিত করে।
  • বিদেশে তাঁর রচিত গীতাঞ্জলী কাব্যের ইংরাজি অনুবাদ বিশেষ জনপ্রিয়তা পায় । সেই সুবাদে তাঁকে ১৯১৩ সালের নভেম্বর মাসে সাহিত্যে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার নোবেল পুরস্কার দিয়ে সন্মানিত করা হয় । গীতাঞ্জলির জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। গীতাঞ্জলি একটি কবিতার সংকলন, যাতে মোট ১০৩ টি কবিতা রয়েছে।
  • ১৯১৫ সালে তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নাইট উপাধি পান । কিন্তু ১৯১৯ সালে ঘটে যাওয়া জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন ।
  • ১৯৩০ সালে রবীন্দ্রনাথের আঁকা একটা ছবি, প্যারিস ও লন্ডনে প্রদর্শিত হয় ।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানের ডার্টিংটন হল স্কুলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ।
  • ৭ই মে ১৯৬১ সালে, ভারতীয় ডাকবিভাগ সম্মান জ্ঞাপনের উদেশ্যে, তাঁর ছবি দেওয়া একটা ডাক টিকিট প্রকাশ করে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আশ্চর্যজনক তথ্য

  • মাত্র আট বছর বয়স থেকেই তিনি কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন ।
  • তিনি চিরাচরিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে একদম তুচ্ছ মনে করতেন এবং সেই চিরাচরিত শিক্ষার অধীনে থেকে পড়তে ভালোবাসতেন না ।
  • তিনি ভারতীয় সাহিত্য ও কলায় বিপ্লবের উদ্দেশ্যে, বাংলায় নবজাগরণ আন্দোলন শুরু করেছিলেন ।
  • বিখ্যাত সিনেমা পরিচালক সত্যজিৎ রায়, রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যিক কর্মকান্ডে বিশেষভাবে প্রভাবিত হন । “পথের পাঁচালী” সিনেমায় পরিচিত সেই ট্রেনের দৃশ্য, আসলে কবিগুরু রচিত “চোখের বালিতে” বর্ণিত একটা ঘটনার থেকে অনুপ্রাণিত ছিলো ।
  • রবীন্দ্রনাথ একজন মহান সুরকারও ছিলেন ।  তিনি প্রায় দুই হাজারেরও বেশি গান নিজে রচনা করেছিলেন ।
  • বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই একমাত্র ব্যক্তি যার দুটি রচনা দুটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। ভারতের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে….’ যা ২৪ জানুয়ারী ১৯৫০ সালে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল। ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন। যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ তার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে বেছে নেয়।
  • ১৯৩০ সালে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সাথে দেখা করেছিলেন।
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন প্রথম অ-ইউরোপীয় যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
  • জালিয়ানওয়ালা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর “নাইট হুড” উপাধি ত্যাগ করেন।  

Frequently Asked Questions

Q1:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছদ্মনাম কি?

Ans:ভানুসিংহ (Vanusingh)।

Q2:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন?

Ans:১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

Q3:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নীর নাম কি? 

Ans:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নীর নাম (স্ত্রী) মৃণালিনী দেবী।

Q4:কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কে ও কবে ‘নাইট’ উপাধি দেন?

Ans:১৯১৫ খ্রীষ্টাব্দে ব্রিটিশরাজ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘নাইট’ উপাধি দেন

Q5:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ কোনটি?

Ans:কবিকাহিনী

Q6:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপোর নাম কি?

Ans:সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর

Q7:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কবিতা কোনটি?

Ans:প্রথম কবিতা ‘অভিলাষ’(১৮৭৪)।

Q8:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ কবিতা কোনটি?

Ans:শেষ কবিতা ‘তোমার সৃষ্টির পথ’ মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে লিখেছিলেন।

Q9:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কি?

Ans:কবি কাহিনী(১৮৭৮)

Q10:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ উপন্যাস কোনটি?

Ans:চার অধ্যায়(১৯৩৪)

Q11:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থের নাম কি?

Ans:জীবনস্মৃতি(১৯১২), ছেলেবেলা(১৯৪০) ও আত্মপরিচয়(১৯৪৩)।

Q12:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত বছর বয়সে নোবেল পুরস্কার পান?

Ans:৫২ বছর বয়সে।

Q13:রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি কোথায় অবস্থিত?

Ans:কুঠিবাড়ি রোড, শিলাইদহ, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।


এই লেখাটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । আশাকরি ভালো লেগেছে । ভালো লাগলে শেয়ার করে বন্ধুদের পাঠিয়ে দেবেন । তারাও আপনার মাধ্যমে লেখাটি পড়তে পারবে ও অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে । এই ধরনের আরও লেখা পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি সাবক্রাইব করে রাখবেন । লেখার মান কেমন হল কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না । কোনও পরামর্শ বা তথ্য দেওয়ার থাকলে তাও কমেন্টে জানাবেন । ধন্যবাদ ।

হ্যালো বন্ধুরা, আমি কিংশুক দেবনাথ (Kingshuk Debnath), এই সাইটের রূপকার ও প্রতিষ্ঠাতা । পাশাপাশি আমি একজন লেখকও বটে । আমি চাই, নতুন প্রজন্মের সামনে বাঙালী বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের জীবন সংগ্রাম সহ তাঁদের যাবতীয় তথ্য তুলে ধরতে । নতুন প্রজন্ম ঐ সব সফল ব্যাক্তিদের সম্পর্কে জানবে এবং নিজেদের জীবনে একটি লক্ষ্য স্থির করবে । আমি আরও চাই, নতুন প্রজন্ম সহ সমস্ত বাঙালী নিয়মিত আমার সাইটে নজর রাখুক এবং বিখ্যাত ব্যাক্তিদের জীবন সংগ্রাম দেখে নিজেরা উদ্বুদ্ধ হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করুক...

2 thoughts on “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনী – Rabindranath Tagore Biography in Bengali 2023”

  1. খুব ভালো। অসাধারণ লেখা। অনেক কথা জানা গেছে।

    Reply

Leave a Comment